গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে এ সময়ে সরকারের প্রধান ঝোঁক ছিল দ্বিপক্ষীয় ঋণ নেওয়ার দিকে। মাত্র তিনটি দেশ—ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণ সমগ্র ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। যদিও এসব ঋণের শর্ত কঠিন ছিল, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারি ও মান ছিল দুর্বল। ঋণ পরিশোধের কম সময় পাওয়ায় দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতিমধ্যে অনুভূত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৪ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৪০১ কোটি ডলার এসেছে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে। এই দেশগুলোর কাছ থেকে বাছবিচারহীন ঋণ নেওয়ায় দেশের ঋণের বোঝা ভারী হয়েছে এবং মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
চীন, রাশিয়া ও ভারতের ঋণে বাংলাদেশে বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রেল প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। তবে এই ঋণগুলো দ্রুত পরিশোধের সময়সীমা ও কঠোর শর্তের কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি ইতিমধ্যে পরিশোধ শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন, রাশিয়া ও ভারতের ঋণ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলেছে। প্রকল্পের মান ও ঋণের শর্ত ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ না করায় এসব ঋণ ভবিষ্যতে আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, চীনা ও রুশ ঋণের ক্ষেত্রে অর্থ লুটপাট ও প্রকল্পের খরচ বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
বিগত দেড় দশকে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সোয়া তিন গুণ বেশি। এতে মাথাপিছু ঋণ ১৫০ ডলার থেকে বেড়ে প্রায় ৪০০ ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমানে সরকারের গঠিত একটি বিশেষ কমিটি বিদেশি ঋণে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করছে। তারা এসব প্রকল্পের শর্ত, প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনৈতিক সার্থকতা যাচাই করছে, যার ওপর ভিত্তি করে ৯০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।